সনদ আইন বলতে কি বুঝ? ১৮১৩ সনদ আইনের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর।

গ' বিভাগ

দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস। অনার্স তৃতীয় বর্ষ।

আজকের আলোচনা, ১৭৬৫-১৭৯৩ পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ার ইস্টই ন্ডিয়া কোম্পানির ভূমি রাজস্ব নীতির বিশ্লেষণ।

সনদ আইন বলতে কি বুঝ? ১৮১৩ সনদ আইনের বৈশিষ্ট্য গুলো আলোচনা কর।
সনদ আইন

প্রশ্নঃ সনদ আইন বলতে কি বুঝ?

ভূমিকা: ১৭৭২ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার শাসনভার গ্রহণ করলেও তখনও প্রশাসনিক দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলা দূর হয়নি। এ কারণে ব্রিটিশ সরকার কোম্পানির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন নীতির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। ফলে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ১৭৯৩ সালে সর্বপ্রথম একটি সনদ আইন বা চার্টার অ্যাক্ট পাস করে, যা কোম্পানির প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডকে নিয়ন্ত্রিত করতো। এরপর প্রতি ২০ বছর পর পর ১৮১৩, ১৮৩৩ ও ১৮৫৩ সালে নতুন চার্টার অ্যাক্ট প্রণীত হয়। বিশেষ করে ১৮১৩ সালের সনদ আইন ভারতীয় উপমহাদেশে প্রশাসনিক পরিবর্তন ও ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থায় নতুন দিক নির্দেশনা যোগ করে। এসব সনদ আইন তৎকালীন সময়ে ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছিল।
সনদ আইন বা চার্টার অ্যাক্ট: ১৭৬৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভের মাধ্যমে প্রশাসনিক কর্তৃত্ব অর্জন করে। কিন্তু কোম্পানির কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও নিপীড়নমূলক শাসনব্যবস্থার ফলে ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। ফলে ১৭৭২ সালে কোম্পানি নিজেই বাংলার শাসনভার গ্রহণ করে।  
পরবর্তী সময়ে কোম্পানির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে ১৭৭৩ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট "রেগুলেটিং অ্যাক্ট" পাস করে, যা কোম্পানির শাসনব্যবস্থার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে এবং একচেটিয়া বাণিজ্যের অনুমতি দেয়। তবে ১৭৯৩ সালে সেই বাণিজ্য অধিকারের মেয়াদ শেষ হলে, ব্রিটেনে ভারতীয় বাণিজ্য নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা ভারতের বাজার উন্মুক্ত করার দাবি জানালে, ব্রিটিশ সরকার কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যের মেয়াদ নবায়নসহ শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়।  
এর ধারাবাহিকতায়, ১৭৯৩ থেকে ১৮৫৩ সালের মধ্যে প্রতি ২০ বছর অন্তর ব্রিটিশ পার্লামেন্ট চারটি আইন পাস করে, যা সনদ আইন বা চার্টার অ্যাক্ট নামে পরিচিত। এই সনদ আইন ভারতের শাসন ও প্রশাসনের কাঠামোতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়।
নিম্নে সংক্ষেপে চারটি সনদ আইন তুলে ধরা হলো:
১. ১৭৯৩ সালের সনদ আইন: ১৭৯৩ সালের সনদ আইনে ১৭৭৩ সালের রেগুলেটিং অ্যাক্ট অনুসারে কোম্পানিকে আরও ২০ বছর একচেটিয়া বাণিজ্য করার অধিকার দেওয়া হয়। এ সনদটি পার্লামেন্টে কোনো বিরোধিতা ছাড়াই পাস হয়। এছাড়া, বোর্ড অব কন্ট্রোলের সদস্যদের জন্য বেতনের ব্যবস্থা করা হয়।
২. ১৮১৩ সালের সনদ আইন: ১৮১৩ সালের সনদ আইন ১৭৯৩ সালের সনদ আইনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পাস হয়। কোম্পানির আর্থিক সহায়তার জন্য ব্রিটিশ পার্লামেন্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে, যা ১৮১২ সালে তার রিপোর্ট দেয়। সেই রিপোর্টের পর পার্লামেন্ট ১৮১৩ সালের সনদ আইন পাস করে।
৩. ১৮৩৩ সালের সনদ আইন: ১৮৩৩ সালের সনদ আইন ১৮১৩ সালের সনদের মেয়াদ শেষ হলে কোম্পানি নতুন সনদের জন্য পার্লামেন্টে আবেদন জানায়। এরপরে, ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ২০ বছরের জন্য কোম্পানির সনদ নবায়ন করে এবং ১৮৩৩ সালের ২৮ আগস্ট নতুন সনদ আইনটি পাস হয়।
৪. ১৮৫৩ সালে সনদ আইন: ১৮৫৩ সালের সনদ আইন ১৮৩৩ সালের সনদের মেয়াদ শেষ হলে কোম্পানি নতুন সনদের জন্য পার্লামেন্টে আবেদন জানায়। এই আইনের মাধ্যমে ভারতের শাসনব্যবস্থায় প্রথম পার্লামেন্টের ভূমিকা শুরু হয়।

8 মন্তব্যসমূহ

  1. অনেক কিছু জানতে পারলাম

    উত্তরমুছুন
  2. অনেক সুন্দর ভাবে আপনি লিখেছেন ধন্যবাদ আপনাকে

    উত্তরমুছুন
  3. সনদ আইনের বৈশিষ্ট্যগুলো অনেক সুন্দর ভাবে আপনি লিখেছেন ধন্যবাদ আপনাকে

    উত্তরমুছুন
নবীনতর পূর্বতন