গ' বিভাগ
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস স্বাধীন বাংলাদেশ। অনার্স প্রথম বর্ষ।
আজকের আলোচনা, অখণ্ড স্বাধীন বাংলা গঠনের পরিকল্পনা ব্যাখ্যা কর, এ পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছিল কেন?
![]() |
অখণ্ড স্বাধীন বাংলা গঠনের পরিকল্পনা। |
প্রশ্নঃ অখণ্ড স্বাধীন বাংলা গঠনের পরিকল্পনা ব্যাখ্যা কর, এ পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছিল কেন?
অথবা, ১৯৪৭ সালে সোহরাওয়ার্দী ও শরৎ বসুর অখণ্ড বাংলা গঠনের প্রস্তাব ও এর পরিণতি সম্পর্কে লিখ।
অথবা, ১৯৪৭ সালে স্বাধীন অবিভক্ত বাংলা গঠনের
পরিকল্পনাটি পর্যালোচনা কর।
অথবা, ১৯৪৭ সালে স্বাধীন অবিভক্ত বাংলাদেশ গঠনের পরিকল্পনাটি বিশ্লেষণ কর।
অথবা, স্বাধীন অবিভক্ত বাংলা গঠন করার লক্ষ্যে ১৯৪৭ সালে যে পরিকল্পনাটি গ্রহণ করা হয়েছিল তার বর্ণনা দাও।
অথবা, অবিভক্ত বাংলা বলতে কী বুঝ? এ প্রচেষ্টা কেন ব্যর্থ হয় বর্ণনা কর।
অথবা, ১৯৪৭ সালে সোহরাওয়ার্দী ও শরৎ বসুর অখণ্ড বাংলা গঠনের প্রস্তা ও এর পরিণতি সম্পর্কে লিখ।
উত্তর: ভূমিকা: অবিভক্ত বাংলার শেষ মুখ্যমন্ত্রী ১৯৪৭ সালের ২৭ এপ্রিল দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ভারত বিভাজনের প্রাক্কালে "স্বাধীন অখন্ড বাংলা রাষ্ট্র" প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়ার ঘোষণা দেন। সোহরাওয়ার্দী, এই উদ্যোগের আওতায়, বাংলার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে মি. জিন্নাহ’র সাথে আলোচনায় বসেন। এ সময়ে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সেক্রেটারি আবুল হাশিম, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর বড় ভাই শরৎচন্দ্র বসু এবং বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের সংসদীয় দলের নেতা কিরণ সংকর রায়সহ অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও এই প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। এই প্রচেষ্টা সফল হলে ভারত ও পাকিস্তান ছাড়াও "অবিভক্ত বাংলা" একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতো, কিন্তু বাঙালিদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি এবং কিছু পাকিস্তানিদের স্বার্থের কারণে পরিকল্পনাটি ব্যর্থ হয়।অখণ্ড স্বাধীন বাংলা গঠনের পরিকল্পনা: বাংলার ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করতে ১৯৪৭ সালের ২৭ এপ্রিল, তৎকালীন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী দিল্লিতে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ’র সঙ্গে আলোচনা করেন। এর পর পরই দিল্লিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি ‘স্বাধীন বাংলা’ গঠনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। এই পরিকল্পনায় বলা হয় যে, বাংলায় একটি নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে, যার প্রধানমন্ত্রীর পদে একজন মুসলমান এবং মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে অর্ধেক মুসলমান ও অর্ধেক অমুসলমান থাকবে। মন্ত্রিসভার সদস্যরা প্রাপ্তবয়স্কদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। এই পরিষদ সিদ্ধান্ত নেবে যে, বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম থাকবে, নাকি পাকিস্তান বা ভারত দ্বারা শাসিত হবে।
তারপর বাংলার হিন্দু-মুসলমান নেতৃবৃন্দ একত্র হয়ে যুক্ত বাংলার পক্ষ সমর্থন করেন। বঙ্গভঙ্গ রোধ এবং স্বাধীন বাংলার কাঠামো নির্ধারণের জন্য প্রাদেশিক মুসলিম লীগের কার্যকরী পরিষদ ১৯৪৭ সালের ৩০ এপ্রিল সভায় মওলানা আকরাম খাঁর নেতৃত্বে একটি সাবকমিটি গঠন করে। এই সাবকমিটিতে সদস্য ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, হাবিবুল্লাহ বাহার, হামিদুল হক চৌধুরী, ইউসুফ আলী চৌধুরী, ফজলুর রহমান এবং নূরুল আমীন (আহ্বায়ক)। এ সময়, প্রাদেশিক মুসলিম লীগের উদ্যোগের প্রতি বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের প্রধান বাবু সুরেন্দ্রমোহন ঘোষ, কংগ্রেস পার্লামেন্টারি দলের বাবু কিরণ শংকর রায় এবং ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা শরৎচন্দ্র বসু আশানুরূপ সাড়া দেন। ১৯৪৭ সালের ২৮ এপ্রিল থেকে ১২ মে পর্যন্ত বাংলার হিন্দু-মুসলমান নেতৃবৃন্দ অবিভক্ত বাংলার প্রশ্নে বিভিন্ন বৈঠকে মিলিত হন। এই সময়েই গান্ধীজি কলকাতায় অবস্থান করছিলেন। অবিভক্ত বাংলা নিয়ে আলোচনার জন্য ১৯৪৭ সালের ৯ মে, ১০ মে, ১১ মে ও ১২ মে শরৎচন্দ্র বসু, আবুল হাশিম, সোহরাওয়ার্দী এবং ফজলুর রহমান গান্ধীজির সাথে সাক্ষাৎ করেন। তবে গান্ধীজি ওইসব বৈঠকে রাজনৈতিক বিচক্ষণতা প্রদর্শন করে স্বাধীন বাংলার বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী বিষয়ে তাদের প্রস্তাব পৌঁছানোর আশ্বাস দেন।
শরৎ বসুর ছয় দফা প্রস্তাব: গান্ধীজির কাছ থেকে স্পষ্ট কোনো আশ্বাস না পাওয়ার পর, ১৯৪৭ সালের ১২ মে শরৎচন্দ্র বসু অবিভক্ত বাংলার ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি ছয় দফা নীতিমালা পেশ করেন। এই নীতিমালায় যে বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছিল, তা হলো:
১. বাংলা হবে একটি সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র।
২. সংবিধান প্রণয়ন পর বাংলার আইন পরিষদ গঠিত হবে প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটে যৌথ নির্বাচনের মাধ্যমে।
৩. এইভাবে নির্বাচিত আইন পরিষদ সিদ্ধান্ত নিবে, অবশিষ্ট ভারতবর্ষের সাথে বাংলার সম্পর্ক কী হবে।
৪. বর্তমান মুসলিম লীগ মন্ত্রিপরিষদ বিলুপ্ত করা হবে এবং তার জায়গায় একটি সর্বদলীয় মধ্যবর্তী মন্ত্রিপরিষদ গঠন করা হবে।
৫. বাংলার পাবলিক সার্ভিস বাঙালিদের দ্বারা গঠিত হবে এবং সেখানে হিন্দু-মুসলমানের সমান প্রতিনিধিত্ব থাকবে।
৬. সংবিধান প্রণয়নের জন্য একটি অস্থায়ী গণপরিষদ গঠন করা হবে, যার সদস্য সংখ্যা হবে ৬১ (৩১ জন মুসলমান এবং ৩০ জন অমুসলমান)।
এই ছয় দফা প্রস্তাবের মাধ্যমে শরৎচন্দ্র বসু বাংলার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য নতুন পথে এগিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেন।
খসড়া সংবিধান: শরৎচন্দ্র বসুর ছয় দফা নীতিমালার অনুরূপ একটি ঘোষণা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কর্তৃকও ১৯৪৭ সালের ১২ মে থেকে ২০ মে পর্যন্ত বাঙালি হিন্দু-মুসলমান নেতৃবৃন্দের মধ্যে আলোচনার পর পেশ করা হয়। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মুখ্যমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী, মুসলিম লীগ প্রাদেশিক সেক্রেটারি আবুল হাশিম, বগুড়ার মোহাম্মদ আলী, ঢাকার ফজলুর রহমান (মন্ত্রী), বঙ্গীয় কংগ্রেস নেতা কিরণ শংকর রায়, সত্যরঞ্জন বখ্শী এবং ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা শরৎচন্দ্র বসু। ২০ মে ১৯৪৭ সালে শরৎচন্দ্র বসুর বাসায় এক সম্মেলনে তারা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলার শাসনতান্ত্রিক কাঠামোর খসড়া প্রণয়ন করেন। খসড়া চুক্তির শর্তসমূহ নিচে তুলে ধরা হলো:
১. বাংলা হবে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র, এবং এর ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যান্য অংশের সাথে সম্পর্ক কি হবে তা এই স্বাধীন রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তে নির্ধারিত হবে।
২. হিন্দু ও মুসলমান জনসংখ্যার অনুপাতে আসন সংখ্যা বণ্টন করে প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটে যৌথ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলা আইন পরিষদ গঠিত হবে। জনসংখ্যার অনুপাতে হিন্দু ও তফশিলি সম্প্রদায়ের মধ্যে আসন সংখ্যা বণ্টন করা হবে।
৩. যদি ব্রিটিশ সরকার স্বাধীন বাংলার পরিকল্পনা মেনে নেয় বা বাংলা ভাগ করা হবে না বলে ঘোষণা দেয়, তবে বাংলার মন্ত্রিসভা ভেঙে দেওয়া হবে এবং এর স্থলে একটি অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে। এই মন্ত্রিসভার প্রধানমন্ত্রীর পদ বাদে অন্যান্য সদস্যপদ হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে সমানভাবে বণ্টিত হবে। মন্ত্রিসভার প্রধানমন্ত্রী হবেন একজন মুসলমান এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হবেন একজন হিন্দু।
৪. নতুন সংবিধান অনুযায়ী আইন পরিষদ ও মন্ত্রিসভা গঠিত না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনীসহ সকল চাকরি বাঙালিদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে এবং চাকরিতে সমানসংখ্যক বাঙালি হিন্দু ও মুসলমান নিয়োগ করা হবে।
এই ছয় দফা প্রস্তাবের মাধ্যমে শরৎচন্দ্র বসু বাংলার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য নতুন পথে এগিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেন।
খসড়া সংবিধান: শরৎচন্দ্র বসুর ছয় দফা নীতিমালার অনুরূপ একটি ঘোষণা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কর্তৃকও ১৯৪৭ সালের ১২ মে থেকে ২০ মে পর্যন্ত বাঙালি হিন্দু-মুসলমান নেতৃবৃন্দের মধ্যে আলোচনার পর পেশ করা হয়। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মুখ্যমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী, মুসলিম লীগ প্রাদেশিক সেক্রেটারি আবুল হাশিম, বগুড়ার মোহাম্মদ আলী, ঢাকার ফজলুর রহমান (মন্ত্রী), বঙ্গীয় কংগ্রেস নেতা কিরণ শংকর রায়, সত্যরঞ্জন বখ্শী এবং ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা শরৎচন্দ্র বসু। ২০ মে ১৯৪৭ সালে শরৎচন্দ্র বসুর বাসায় এক সম্মেলনে তারা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলার শাসনতান্ত্রিক কাঠামোর খসড়া প্রণয়ন করেন। খসড়া চুক্তির শর্তসমূহ নিচে তুলে ধরা হলো:
১. বাংলা হবে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র, এবং এর ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যান্য অংশের সাথে সম্পর্ক কি হবে তা এই স্বাধীন রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তে নির্ধারিত হবে।
২. হিন্দু ও মুসলমান জনসংখ্যার অনুপাতে আসন সংখ্যা বণ্টন করে প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটে যৌথ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলা আইন পরিষদ গঠিত হবে। জনসংখ্যার অনুপাতে হিন্দু ও তফশিলি সম্প্রদায়ের মধ্যে আসন সংখ্যা বণ্টন করা হবে।
৩. যদি ব্রিটিশ সরকার স্বাধীন বাংলার পরিকল্পনা মেনে নেয় বা বাংলা ভাগ করা হবে না বলে ঘোষণা দেয়, তবে বাংলার মন্ত্রিসভা ভেঙে দেওয়া হবে এবং এর স্থলে একটি অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে। এই মন্ত্রিসভার প্রধানমন্ত্রীর পদ বাদে অন্যান্য সদস্যপদ হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে সমানভাবে বণ্টিত হবে। মন্ত্রিসভার প্রধানমন্ত্রী হবেন একজন মুসলমান এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হবেন একজন হিন্দু।
৪. নতুন সংবিধান অনুযায়ী আইন পরিষদ ও মন্ত্রিসভা গঠিত না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনীসহ সকল চাকরি বাঙালিদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে এবং চাকরিতে সমানসংখ্যক বাঙালি হিন্দু ও মুসলমান নিয়োগ করা হবে।
৫. বাংলার ভবিষ্যৎ সংবিধান রচনার জন্য একটি গণপরিষদ গঠন করা হবে, যার মধ্যে মোট ৩০ জন সদস্য নির্বাচিত হবেন। বর্তমানে আইনসভার হিন্দু ও মুসলমান সদস্যগণই এই গণপরিষদের সদস্য নির্বাচন করবেন।
এখানে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলার জন্য শাসনতান্ত্রিক কাঠামোর প্রস্তাব করা হয় যা দেশের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক দিক পরিবর্তন করার জন্য লক্ষ্য রাখে।
অখণ্ড স্বাধীন বাংলা গঠনের পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার কারণ: নিম্নের অখন্ড স্বাধীন বাংলা গঠনের পরিকল্পনা ব্যর্থ হবার পেছনে যে সকল কারণ বিদ্যমান ছিল তা আলোচনা করা হলো।
১.কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের হাইকমান্ডের সম্মতির অভাব: কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের হাইকমান্ডের সম্মতি না পাওয়ার কারণে অখণ্ড স্বাধীন বাংলা রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ গান্ধী ও সর্দার বলভাই প্যাটেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেও তারা এই পরিকল্পনায় কোনো সম্মতি দেননি; বরং তারা লর্ড মাউন্ট ব্যাটেনের ভারত বিভাজনের পরিকল্পনা অনুসরণ করতে প্রাদেশিক নেতাদের নির্দেশ দেন। মুসলিম লীগের কয়েকজন উদারপন্থি বাঙালি নেতা প্রথমদিকে এই উদ্যোগে সহমত প্রকাশ করলেও, শেষ পর্যন্ত তারা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, লিয়াকত আলী খান, খাজা নাজিমুদ্দিন, মাওলানা আকরাম খাঁ প্রমুখের প্ররোচনায় এ আন্দোলন থেকে সরে আসেন।
২.হিন্দু-মুসলমান পরস্পরের প্রতি আত্মবিশ্বাসের অভাব: হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে একে অপরের প্রতি আস্থা ও আত্মবিশ্বাসের অভাব অখণ্ড স্বাধীন বাংলা গঠনের পরিকল্পনার ব্যর্থতার আরেকটি বড় কারণ। ১৯৩৭ সালের নির্বাচনের পর মুসলিম লীগ বাংলার শাসনক্ষমতায় আসে, আর কেন্দ্রে কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিল। কংগ্রেসের দলীয় সংগীত ভারতের জাতীয় সংগীত হিসেবে ঘোষণার পর মুসলমানদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এই পরিস্থিতি, বিশেষ করে ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে এ. কে. ফজলুল হকের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ায় হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে আতঙ্ক এবং আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা দেয়, যা পরিকল্পনাটি ব্যর্থ করে।
৩.হিন্দু নেতৃবৃন্দের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবোধ: হিন্দু নেতৃবৃন্দের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবোধের কারণে এই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। ১৯৩৭-৪৭ সময়কালে বাংলার হিন্দু সম্প্রদায় সরকার পরিচালনায় ভূমিকা রাখার সুযোগ পায়নি, বরং মুসলমানরা মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করে। এর ফলে হিন্দু নেতৃবৃন্দের মধ্যে রাজনৈতিক হতাশা এবং বিচ্ছিন্নতাবোধ সৃষ্টি হয়, যা অখণ্ড স্বাধীন বাংলা গঠনের পরিকল্পনাকে ব্যর্থ করে তোলে।
৪.দক্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বের অভাব: দক্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বের অভাবও এ পরিকল্পনার ব্যর্থতার আরেকটি প্রধান কারণ ছিল। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শরৎচন্দ্র বসু, কিরণ শংকর রায় ও আবুল হাশিম ছাড়া কোনো নেতা এ উদ্যোগের নেতৃত্ব দেননি। পাশাপাশি, মুসলিম লীগের প্রতিক্রিয়াশীল অংশের নেতারা, যেমন খাজা নাজিমুদ্দিন, মাওলানা আকরাম খাঁ এই আন্দোলনের তীব্র বিরোধিতা করেন। বাংলার সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হকও এই আন্দোলনে নীরব থাকেন, ফলে পরিকল্পনাটি সফল হতে পারেনি।
৫.মুসলিম লীগের অন্তর্দ্বন্দ্ব: ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগের অভ্যন্তরে গম্ভীর দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। একপক্ষ ছিল জিন্নাহ, লিয়াকত আলী খান এবং অপরপক্ষ ছিল সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিম। একদিকে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ধারক বাহক ছিলেন জিন্নাহ ও লিয়াকত আলী খান, অন্যদিকে অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-ধারার বাহক ছিলেন সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিম। এই অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে অখণ্ড স্বাধীন বাংলা গঠনের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।
৬.নেহরু-প্যাটেলের বিরোধিতা: নেহরু এবং প্যাটেল অখণ্ড স্বাধীন বাংলা পরিকল্পনাকে “একটি ফাঁদ” হিসেবে আখ্যায়িত করেন। প্যাটেল বাংলার প্রখ্যাত হিন্দু ও কংগ্রেস নেতাদের সতর্ক করে বলেন যে, বাংলার হিন্দুদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে হলে বাংলাকে অবশ্যই বিভক্ত করতে হবে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, ১৯৪৭ সালে "স্বাধীন অবিভক্ত বাংলা" গঠনের পরিকল্পনাটি একটি যৌক্তিক এবং সুন্দর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু গান্ধীজির অবিভক্ত ভারতবর্ষের পরিকল্পনা, কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের হীন চক্রান্ত, এবং কিছু নেতার স্বার্থপরতার কারণে এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
এখানে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলার জন্য শাসনতান্ত্রিক কাঠামোর প্রস্তাব করা হয় যা দেশের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক দিক পরিবর্তন করার জন্য লক্ষ্য রাখে।
অখণ্ড স্বাধীন বাংলা গঠনের পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার কারণ: নিম্নের অখন্ড স্বাধীন বাংলা গঠনের পরিকল্পনা ব্যর্থ হবার পেছনে যে সকল কারণ বিদ্যমান ছিল তা আলোচনা করা হলো।
১.কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের হাইকমান্ডের সম্মতির অভাব: কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের হাইকমান্ডের সম্মতি না পাওয়ার কারণে অখণ্ড স্বাধীন বাংলা রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ গান্ধী ও সর্দার বলভাই প্যাটেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেও তারা এই পরিকল্পনায় কোনো সম্মতি দেননি; বরং তারা লর্ড মাউন্ট ব্যাটেনের ভারত বিভাজনের পরিকল্পনা অনুসরণ করতে প্রাদেশিক নেতাদের নির্দেশ দেন। মুসলিম লীগের কয়েকজন উদারপন্থি বাঙালি নেতা প্রথমদিকে এই উদ্যোগে সহমত প্রকাশ করলেও, শেষ পর্যন্ত তারা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, লিয়াকত আলী খান, খাজা নাজিমুদ্দিন, মাওলানা আকরাম খাঁ প্রমুখের প্ররোচনায় এ আন্দোলন থেকে সরে আসেন।
২.হিন্দু-মুসলমান পরস্পরের প্রতি আত্মবিশ্বাসের অভাব: হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে একে অপরের প্রতি আস্থা ও আত্মবিশ্বাসের অভাব অখণ্ড স্বাধীন বাংলা গঠনের পরিকল্পনার ব্যর্থতার আরেকটি বড় কারণ। ১৯৩৭ সালের নির্বাচনের পর মুসলিম লীগ বাংলার শাসনক্ষমতায় আসে, আর কেন্দ্রে কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিল। কংগ্রেসের দলীয় সংগীত ভারতের জাতীয় সংগীত হিসেবে ঘোষণার পর মুসলমানদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এই পরিস্থিতি, বিশেষ করে ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে এ. কে. ফজলুল হকের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ায় হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে আতঙ্ক এবং আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা দেয়, যা পরিকল্পনাটি ব্যর্থ করে।
৩.হিন্দু নেতৃবৃন্দের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবোধ: হিন্দু নেতৃবৃন্দের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবোধের কারণে এই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। ১৯৩৭-৪৭ সময়কালে বাংলার হিন্দু সম্প্রদায় সরকার পরিচালনায় ভূমিকা রাখার সুযোগ পায়নি, বরং মুসলমানরা মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করে। এর ফলে হিন্দু নেতৃবৃন্দের মধ্যে রাজনৈতিক হতাশা এবং বিচ্ছিন্নতাবোধ সৃষ্টি হয়, যা অখণ্ড স্বাধীন বাংলা গঠনের পরিকল্পনাকে ব্যর্থ করে তোলে।
৪.দক্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বের অভাব: দক্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বের অভাবও এ পরিকল্পনার ব্যর্থতার আরেকটি প্রধান কারণ ছিল। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শরৎচন্দ্র বসু, কিরণ শংকর রায় ও আবুল হাশিম ছাড়া কোনো নেতা এ উদ্যোগের নেতৃত্ব দেননি। পাশাপাশি, মুসলিম লীগের প্রতিক্রিয়াশীল অংশের নেতারা, যেমন খাজা নাজিমুদ্দিন, মাওলানা আকরাম খাঁ এই আন্দোলনের তীব্র বিরোধিতা করেন। বাংলার সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হকও এই আন্দোলনে নীরব থাকেন, ফলে পরিকল্পনাটি সফল হতে পারেনি।
৫.মুসলিম লীগের অন্তর্দ্বন্দ্ব: ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগের অভ্যন্তরে গম্ভীর দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। একপক্ষ ছিল জিন্নাহ, লিয়াকত আলী খান এবং অপরপক্ষ ছিল সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিম। একদিকে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ধারক বাহক ছিলেন জিন্নাহ ও লিয়াকত আলী খান, অন্যদিকে অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-ধারার বাহক ছিলেন সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিম। এই অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে অখণ্ড স্বাধীন বাংলা গঠনের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।
৬.নেহরু-প্যাটেলের বিরোধিতা: নেহরু এবং প্যাটেল অখণ্ড স্বাধীন বাংলা পরিকল্পনাকে “একটি ফাঁদ” হিসেবে আখ্যায়িত করেন। প্যাটেল বাংলার প্রখ্যাত হিন্দু ও কংগ্রেস নেতাদের সতর্ক করে বলেন যে, বাংলার হিন্দুদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে হলে বাংলাকে অবশ্যই বিভক্ত করতে হবে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, ১৯৪৭ সালে "স্বাধীন অবিভক্ত বাংলা" গঠনের পরিকল্পনাটি একটি যৌক্তিক এবং সুন্দর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু গান্ধীজির অবিভক্ত ভারতবর্ষের পরিকল্পনা, কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের হীন চক্রান্ত, এবং কিছু নেতার স্বার্থপরতার কারণে এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
Good Site
উত্তরমুছুনWow beautiful
উত্তরমুছুন