মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস তৃতীয় বর্ষ খ' বিভাগ (পর্ব–১)

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস 

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ইতিহাস বিভাগ, ৩য় বর্ষ। আজকের আলোচনা জর্জ ওয়াশিংটনের পরিচয়, প্যারিস শান্তি চুক্তির শর্ত, কনফেডারেশনের  যুগ, বোস্টন হত্যাকাণ্ড। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস অনার্স ৩য় বর্ষ সাজেশন। বিষয়: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস। বিষয় কোড: ২৩১৫০৭।

খ' বিভাগ প্রশ্ন ও উত্তর। 


প্রশ্ন : জর্জ ওয়াশিংটনের পরিচয় দাও। 

 উত্তর:   ভূমিকা : জর্জ ওয়াশিংটন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে একজন গৌরবোউজ্জ্বল অধ্যায় হিসাবে চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। তিনি ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট এবং আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্রনায়ক। তিনি পরপর দুবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় আহরণ করেন। 
জর্জ ওয়াশিংটনের পরিচয় সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. জর্জ ওয়াশিংটনের জন্ম ও শিক্ষা : জর্জ ওয়াশিংটন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় ১৭৩২ খ্রিস্টাব্দের ২২ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম অগাস্টিন ওয়াশিংটন এবং মায়ের নাম ম্যারি  ওয়াশিংটন। তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা  সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। 
২.আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে জর্জ ওয়াশিংটনের অবদান: আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে জর্জ ওয়াশিংটন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। জর্জ ওয়াশিংটন ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশদের বোস্টন থেকে বিতাড়িত হতে বাধ্য করেন। কিন্তু পরের বছর তিনি ব্রিটিশদের কাছে পরাজিত হন। কিন্তু আবার পরবর্তীতে তিনি বোস্টনের যুদ্ধে ব্রিটিশদের পরাজিত করেন এবং নিউজার্সি পূর্ণ দখল করেন। 
৩. প্রেসিডেন্ট হিসেবে জর্জ ওয়াশিংটন: ১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি ফিলাডেলফিয়ায় অনুষ্ঠিত সাংবিধানিক সভাপতিত্ব  করেন। এ সম্মেলনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন সরকার ব্যবস্থা প্রণয়ন করে। এবং তিনি দুই মেয়াদে  যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি থাকার পর অবসরে যান। 
৪. আমেরিকানদের নিকট ওয়াশিংটন: আমেরিকানদের নিকট জর্জ ওয়াশিংটন চির স্মরণীয় হয়ে আছেন । জর্জ ওয়াশিংটনের মৃত্যুর পর ভার্জিনিয়ার তৃতীয় হেনরি লিও  ওয়াশিংটনের প্রশংসা করে বলেন। " যুদ্ধে প্রথম, শান্তিতে প্রথম এবং জনগণের হৃদয়ে প্রথম" তিনি জীবিত অবস্থায় এবং মৃত্যুর পর ও পরম পূজনীয়।   
উপসংহার : উপর্যক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে জর্জ ওয়াশিংটন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি। তিনি আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে কন্টিনেন্টাল  আর্মির  সর্বাধিনায়কের  দায়িত্ব পালন করেন। এখনো তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতির জনক হিসেবে পরিচিত। 


প্রশ্ন : প্যারিস শান্তি চুক্তির (১৭৮৩) শর্তগুলো লেখ। 

 উত্তর:  ভূমিকা: পৃথিবীর ইতিহাসে যতগুলো শান্তি চুক্তি সম্পাদিত হয় প্যারিস শান্তি চুক্তি তার মধ্যে অন্যতম। আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে ১৭৮৩ সালের প্যারিস শান্তি চুক্তির মাধ্যমে। কারণ এ ঘটনার পর দুই পক্ষের মধ্যে আর তেমন কোন লড়াই সংঘটিত হয়নি। 
প্যারিস শান্তি চুক্তির শর্তাবলী : ১৭৮৩ সালে ৩রা সেপ্টেম্বর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের ভার্সাই  প্রসাদে চূড়ান্তভাবে প্যারিস শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। নিম্নে প্যারিস শান্তি চুক্তির শর্তাবলী উল্লেখ করা হল। 
১। সম্ভব কলোনি হতে সকল সৈন্য প্রত্যাহার করতে হবে।
২। আমেরিকার সীমানা হবে উত্তরে গ্রেটকেল ও কানাডা, দক্ষিণে ফ্লোরিডা রাজ্যের উত্তরের ৩১ ডিগ্রি অক্ষাংশ পর্যন্ত  এবং পশ্চিমে মিসিসিপি নদ পর্যন্ত।   
৩। মিসিসিপি নৌপথ উভয়ের জন্য উন্মুক্ত হবে এবং আমেরিকার নিউ ফন্ডল্যান্ডের নদী ও কানাডিয়ান উপকূলে মাছ ধরার অধিকার পাবে । 
৪। সপ্তবর্ষীবাপী যুদ্ধ শেষে ১৭৬৩ সালে ব্রিটেন কর্তৃক স্পেনের নিকট হতে দখলকৃত ফ্লোরিডা ও মনির্কা একটি পৃথক চুক্তির মাধ্যমে স্পেনকে ফেরত দেবে এবং টোবাগো ও সেনেগালের উপর ফ্রান্সের কর্তৃত্ব স্বীকার করবে।  
। ব্রিটিশ ব্যবসায়ীদের নিকট আমেরিকার যে ঋণ ছিল  তা আমেরিকা পরিষদ করবে। 
উপসংহার : উপর্যুক্ত শর্তাবলির আলোকে স্বাক্ষরিত প্যারিস শান্তি চুক্তি ছিল আমেরিকানদের কূটনৈতিক মেধা, যোগ্যতা ও দক্ষতার পরিচয় । যার মাধ্যমে পৃথিবীর অন্যতম সেরা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ব্রিটেনকে যেমন মাথা নত করতে বাধ্য করেছিল তেমন ফ্রাঞ্চের প্রতি প্রভাব বিস্তার করতেও সক্ষম হয়েছিল।


প্রশ্ন : কনফেডারেশনের  যুগ বলতে কী বুঝ? 

 উত্তর:   ভূমিকা: আমেরিকার স্বাধীনতাকামী ১৩টি উপনিবেশের সম্মিলিত সঙ্ঘকে কনফেডারেশন বলা হয়। এই কনফেডারেশনের উপর ভিত্তি করেই আমেরিকায় প্রথম কেন্দ্ৰীয় সরকার গড়ে উঠে। ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দের ১ মার্চ ম্যারিল্যান্ডে আর্টিকেলস অব কনফেডারেশন অনুমোদনের সময় এই কনফেডারেশনের নামকরণ করা হয় `The United States of America'। 
কনফেডারেশনের যুগ: ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কনফেডারেশনের যুগ বলা হয়। আমেরিকান বিপ্লবের পর ১৭৮০ এর দশকে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান প্রণয়নের পূর্বে ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে আর্টিকেলস অব কনফেডারেশন সংশোধন করা হয়। ১৭৮৭ খ্রি. ফিলাডেলফিয়া সম্মেলনে জর্জ ওয়াশিংটনের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান প্রণীত হয়। ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে কনফেডারেশনের যুগ শেষ হয় বেশ কিছু সাংবিধানিক সংশোধনের মাধ্যমে যা যুক্তরাষ্ট্রে একটি নতুন, শক্তিশালী ও জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করে। ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র একটি কনফেডারেশন হিসাবে ছিল । 
কনফেডারেশন গঠনের পটভূমি: কনফেডারেশন গঠনের অন্যতম একটি কারণ হলো উপনিবেশগুলোর বিরুদ্ধে ব্রিটিশ সরকারের কঠোর নীতি। তাছাড়া আমেরিকার উচ্চ পদস্থ কর্মচারিদের নিয়োগের ক্ষমতা ইংল্যান্ডের রাজার হাতে ন্যস্তকরণ কনফেডারেশন গঠনের অন্যতম আরেকটি কারণ । আমেরিকানদের উপর বৃটেনের স্বৈরাচারী মনোভাবের কারণে ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দের ৫ সেপ্টেম্বর প্রথম ফিলাডেলফিয়া সম্মেলনের মাধ্যমে কনফেডারেশন গঠণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। -এ সম্মেলনে জর্জিয়া ছাড়া সকল উপানিবেশ হতে মোট ৫৬ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করে। ১৭৭৫ খ্রিস্টাব্দের ১০ মে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় ফিলাডেলফিয়া সম্মেলন। - জর্জিয়া এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় য,  আমেরিকা কনফেডারেশন  গঠিত হওয়ার পর আর্টিকেলস অফ কনফেডারেশন এর মাধ্যমে তা পরিচালনা করা যে স্বপ্ন আমেরিকার নেতৃবৃন্দ দেখেছিলেেন তা বেশিদূর অগ্রসর হয়নি। 


প্রশ্ন: বোস্টন হত্যাকাণ্ড কী?

 উত্তর:  ভূমিকা:  আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে বোস্টন হত্যাকাণ্ড এক মাইলফলক হিসেবে পরিচিত। বোস্টন হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ ছিল টাউনসেন্ড অ্যাক্ট। টাউনসেন্ড অ্যাক্টকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।
বোস্টন হত্যাকাণ্ড  : ১৭৬৮ সালে বোস্টন  বন্দরে দুটি ব্রিটিশ রেজিমেন্ট স্থায়ীভাবে মোতায়েন করার পরিপ্রেক্ষিতে sons of Liberty- এর ব্যবস্থা করা রদ করার জন্য প্রচেষ্টা শুরু করে।  তাদের নেতৃত্বে বোস্টন বন্দরের জনগণ শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তাদের শুল্ক আদায়ের বাধা সৃষ্টি করেন এবং স্থানীয়  ব্যবসায়ীদের শুল্ক হতে  রক্ষা করতে আরম্ভ করেন। আর এরই পরিপ্রেক্ষিতেই ব্রিটিশ রেজিমেন্ট দুটি মোতায়েন করা হয়েছিল। ফলে স্থানীয় অধিবাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে সৈন্যদেরকে উত্তপ্ত করা শুরু করলে ১৭৭০ সালে ৫ মার্চ সৈন্যগণ  জনতার উপর গুলি ছুড়লে  পাঁচজন লোক নিহত হয়। উপনিবেশসমূহের  স্থানীয় নেতারা এ ঘটনাকে ব্রিটিশ সরকারের বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতার প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করেন। আর ইতিহাসে এই ঘটনাটি বোস্টন হত্যাকাণ্ড নামে পরিচি। যার ফলে উপনিবেশসমূহের জনগণ ব্রিটিশদের প্রতি বিক্ষিপ্ত হন।  
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে বোস্টন হত্যাকাণ্ড অন্যতম একটি নিয়ামক। যার ফলে উপনিবেশসমূহে ব্রিটিশ বিরোধী বিক্ষোভ সৃষ্টি হয় এবং বিদ্রোহ পরিবেশ সৃষ্টি হয় পরিশেষে আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ সংঘটিত হয়। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন