মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস তৃতীয় বর্ষ খ' বিভাগ (পর্ব–২)

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ইতিহাস বিভাগ, ৩য় বর্ষ। আজকের আলোচনা ১৮১২ সালের ইঙ্গ-মার্কিন যুদ্ধের গ্ররুত্ব, লুইজিয়ানা ক্রয়ের গুরুত্ব, Midnight Judges act 1801, ক্যানসাস-নেবরাস্কা বিলের  বিবরণ। অনার্স ৩য় বর্ষ সাজেশন। বিষয়: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস। বিষয় কোড: ২৩১৫০৭।

খ' বিভাগ, সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন। 


প্রশ্ন: ১৮১২ সালের ইঙ্গ-মার্কিন যুদ্ধের গ্ররুত্ব লেখ।

 উত্তর:  ভূমিকা: ১৮১২ সালে ঈঙ্গ মার্কিন যুদ্ধের ক্ষেত্র ছিল উত্তর আমেরিকা ও সমুদ্রপথ। মূলত বাণিজ্যিক স্বার্থই ছিল এ সংঘর্ষের মূল কারণ। ঊনবিংশ শতকের শুরুতে সমুদ্রপথে বাণিজ্যিক কর্মকান্ডকে কেন্দ্র করে ইংল্যান্ড ও আমেরিকার মধ্যে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধের পর আমেরিকায় নতুন জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটেছিল । 
ঈঙ্গ-মার্কিন যুদ্ধের গুরুত্ব : ১৮১২ সালের ঈঙ্গ-মার্কিন যুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নতুন জাতীয়তাবাদ এর জন্ম হয়। নিম্নে ঈঙ্গ-মার্কিন যুদ্ধের গুরুত্ব বর্ণনা করা হলো। 
১। নতুন নতুন রাজ্যের অন্তর্ভুক্তি : ঈঙ্গ-মার্কিন যুদ্ধের ফলে আমেরিকার রাজ্য বড় হতে থাকে। নতুন নতুন অঙ্গরাজ্যসূমহ আমেরিকার সাথে যুক্ত হয়। এসব রাজ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ভার্মন্ট, কেন্টুকি, টেনেসি, ওহায়ো, লুজিয়ানা, ইন্ডিয়ানা, মেসিসিপি ইত্যাদি। 
২। পশ্চিমাঞ্চলে  নতুন বসতি স্থাপন : ঈঙ্গ-মার্কিন যুদ্ধের ফলে আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চলে এক চমকপ্রদ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এ্যাপোলিশিয়ান  পর্বতমালার পশ্চিম দিকে হাজার হাজার লোক পাড়ি জমায় ও বসতি স্থাপন করে। 
৩। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি : ফেডারেল সরকারের প্রয়োজনে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য  একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়। যা আমেরিকার অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সমৃদ্ধি আনয়ন করে। 
৪। যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন : আমেরিকান যুদ্ধের পর পশ্চিমমুখী অভিযানের কারণে এসব এলাকার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্র ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়।পশ্চিমাঞ্চলে ব্যবসা বাণিজ্যের সুবিধায় পূর্ব অঞ্চলের রাজ্যগুলোর পূর্ব পশ্চিম সংযোগ স্থাপন শুরু হয়। 
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ব্রিটেন কর্তৃক আমেরিকার নাবিক অপহরণ, আমেরিকা সীমান্তে  ব্রিটেন কর্তৃক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ইত্যাদি কারণ দেখিয়ে ১৮১২ সালে ১৮ই জুন ঈঙ্গ-মার্কিন যুদ্ধ সংঘটিত হয় । এ যুদ্ধে আমেরিকার অর্থনৈতিক ব্যাপক ক্ষতি হলেও মূলত এ যুদ্ধই ছিল আমেরিকার জনগণের ব্রিটিশ প্রভাব থেকে মুক্তি হওয়ার প্রতিচ্ছবি।


প্রশ্ন : আমেরিকার ইতিহাসে লুইজিয়ানা ক্রয়ের গুরুত্ব লেখ?

 উত্তর:  ভূমিকা : ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বনাপোর্টের কাছ থেকে লুইজিয়ানা  ক্রয় টমাস জেফারসনের  শাসনামলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। টমাস জেফারনের  এ পদক্ষেপের ফলে আমেরিকার আয়তন দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পায়। মার্কিন  যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত কারণে লুজিয়ানা ক্রয় করেন।
লুইজিয়ানা ক্রয়ের গুরুত্ব : ১৮০৩ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসন ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়নের কাছ থেকে ১২ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে লুইজিয়ানা এলাকা ক্রয় করেন। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের আয়তন প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছিল। লুইজিয়ানা এলাকা ছিল পশ্চিমে টেক্সাস ও রকি পর্বতমালা, উত্তরে কানাডা, পূর্বদিকে মিসিসিপি ও লেক পনচার্টারেন এবং দক্ষিণে মেক্সিকো উপসাগর দ্বারা বেষ্টিত। তাই ভৌগোলিকভাবে লুজিয়ানা আমেরিকার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল । অন্য  দিকে  এ বিরাট ভূখণ্ডটি ফ্রান্সের দখলে চলে যাওয়ায় উত্তর আমেরিকায় ফরাসি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা ও সেখানে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রসারকে  রোধ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। এমন কি বিশ্বকে প্রদানত করার স্বপ্নে বিভর নেপোলিয়নের নিকট লুইজিয়ানা  অধিকৃত হওয়া আমেরিকার জন্য রীতিমতো আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসন এ সমস্ত আতঙ্কের কথা বুঝতে পেরে ভৌগোলিকভাবে আমেরিকা কে আরো শক্তিশালী করতে এবং আমেরিকাকে  নেপোলিয়নের হাত থেকে সুরক্ষিত করতে লুইজিয়ানা ক্রয়ের সুযোগ খুঁজতে থাকে। এমত অবস্থায় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসন ১৮০৪ সালে নেপোলিয়নের কাছ থেকে লুইজিয়ানা ক্রয়ের  চুক্তি অনুমোদিত হয়। 
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে প্রেসিডেন্ট জেপারসন কর্তৃক লুইজিনিয়া ক্রয় আমেরিকার ইতিহাসে এক নব দিগন্তের সূচনা করেছিল। এর ফলে পশ্চিমাঞ্চলে  আমেরিকার সম্প্রসারণের দ্বার যেমন উন্মোচিত হয়েছিল তেমন আমেরিকার ব্যবসা-বাণিজ্যে অনেক নিরাপদ হয়েছিল।  


প্রশ্ন : 'Midnight Judges' কাদের বলা হতো?

 উত্তর:  ভূমিকা: ফেডারেলিস্টরা তাদের ক্ষমতা হারানোর ভয়ে তাদের সুবিধার্থে ১৮০১ সালে  একটি জুডিশিয়াল অ্যাক্ট পাস করে। আর এই জুডিশিয়াল একটি ছিল 'Midnight Judges' অ্যাক্ট। টমাস জেফারসন প্রেসিডেন্ট  নির্বাচিত হয়ে উদার ও নিরপেক্ষভাবে আইন প্রয়োগের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। এবং তিনি 'Midnight Judges act' ১৮০১ এর সংস্কার করেন। 
Midnight Judges act এর উৎপত্তি: ফেডারেলিস্টরা তাদের ক্ষমতা হারানোর নিশ্চিত দেখে  ১৮০১ সালের গোড়ার দিকে নতুন একটি জুডিশিয়াল অ্যাক্ট পাস করে। তারা এ জুডিশিয়াল অ্যাক্ট অনুযায়ী অনেক ফেডারেলিস্ট বিচারক নিযুক্ত করে। এরাই হলো 'Midnight Judges' বা মধ্যরাত্রির বিচারক।  
Midnight Judges: ১৮০১ সালের দিকে ফেডারেলিস্টরা একটি আইন পাস করেন যার অধীনে জজ মার্সাল, ডিসট্রিক অ্যাটর্নি এবং আদালতের পেয়াদা পদের সৃষ্টি হয়। এরাই ইতিহাসে 'Midnight Judges' নামে পরিচিত। এই আদালতের কার্য মূলত মধ্যরাতে সম্পাদিত হতো। কিন্তু টমাস জেফারসন প্রেসিডেন্ট হবার পর  ফেডারেলিস্টদের এই বিধ্বংসী পদক্ষেপ গ্রহণ দেখে আইন বিভাগের কিছু সংস্কারের পদক্ষেপ নেন। তিনি জুডিশিয়ারি অ্যাক্টকে বাতিল করেন এবং অসদ আচরণের জন্য দুজন ফেডারেল জজকে অপসারণ করেন ।এর পাশাপাশি  তিনি কোর্টের বিচারপতির আসন সংখ্যা ৬ থেকে কমিয়ে ৫ এ নিয়ে আসেন। 
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, 'Midnight Judges' ছিল মূলত ফেডারেলিস্টদের স্বার্থরক্ষার একটি কৌশল। জেফারসন  তাদের এই বিধ্বংসী পদক্ষেপের কৌশল অনুধাবন করতে পেরে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তাতে সংস্কারের হাত দেন। আর এভাবে তিনি বিচার বিভাগের ভারসাম্য পুনরুদ্ধারের সক্ষম হন। 


প্রশ্ন: ১৮৫৪ সালের ক্যানসাস-নেবরাস্কা বিলের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও? 

 উত্তর:  ভূমিকা:  ক্যানসাস ও নেবরাস্কা বিল ১৮৫৪ সালের জানুয়ারি মাসে সিনেটর এ ডলগাস কর্তৃক উত্থাপিত একটি বিল। যা ঐ বছর ২৫ শে মে সংশোধনী আকারে পাশ হয়। এতে একটি বিশাল এলাকাকে দুইটি টেরিটোরিতে  বিভক্ত করা হয়। যা ক্যানসাস ও নেবরাক্সা নামে পরিচিত। 
ক্যানসাস ও নেবরাস্কা বিলের সংক্ষিপ্ত বিবরণ: ১৮৫০ এর দশকে মার্কিন অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হতে থাকে। আস্তে আস্তে শিল্পায়নের দিকে ঝুঁকে পড়ে উত্তরের রাজ্যগুলো। ফলস্বরূপ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ছোঁয়া লাগে উত্তরে। কিন্তু দাসপ্রথা অবসানের  প্রশ্নে ঐক্যমতে পৌঁছাতে না পারায় পশ্চিমের উন্নয়ন তখনও আলোরমুখ দেখছিল না। এমত অবস্থায় ১৮৫৪ সালের জানুয়ারি মাসে স্টিভেন এ ডলগাস একটি বিল উত্থাপন করেন। এই বিলটি ক্যানসাস নেবরাস্কা বিল হিসেবে পরিচিত। এ বিলটিকে পরবর্তীতে সংশোধন করা হয়  এবং সংশোধনীতে সমগ্র এলাকাকে দুইটি সুনির্দিষ্ট টেরিটরি তথা ক্যানসাস ও নেবরাস্কা অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়। অতঃপর যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে ১৮৫৪ সালের ২৫ শে মে ক্যানসাস ও নেবরাস্কা বিল সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে পাস হয়। এতে বলা হয় অঞ্চল দুটি আশ্রিত এলাকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে এবং এর অধিবাসীরা গণভোটের মাধ্যমে দাসত্বের প্রশ্নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। 
উপসংহার: ১৮৫৪ সালের এই বিল অনুযায়ী ক্যানসাস ও নেবরাক্সা দুইটি সুনির্দিষ্ট পৃথক এলাকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে এ আইনের সবচেয়ে দুর্বল দিক হলো উক্ত অঞ্চলে দাসপ্রথাকে পরক্ষ ভাবে সমর্থন করা হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন