আর্জেন্টিনার ফুটবল খেলোয়াড়
লিওনেল মেসির জীবনী
লিওনেল মেসি |
Biography of Lionel Messi
জন্ম: লিওনেল মেসি, ২৪ জুন ১৯৮৭ সালে আর্জেন্টিনার রসারিও শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন জর্জ হরিয়ের মেসি এবং মায়ের নাম সেলিয়া মারিয়া কুসটোরিস, এবং তার দাদার নাম সিলিয়া লোপেজ মেসি। লিওনেল মেসির বাবা পেশায় একজন কারখানা কর্মী ছিলেন। দুই ভাই বোনের মধ্যে (এক ভাই এক বোন) মেসি ছিলেন ছোট। তার বোনের নাম ছিল মারিয়া সোল মেসি।
Category: Arts & Culture
Full Name: Lionel Andrés Messi
Also called: Leo Messi
Born: June 24, 1987, Rosario, Argentina.
শৈশব: শৈশবে মেসি ছিলের একজন দুরন্ত প্রকৃতির ছেলে। মেসি খুব ছোটবেলা থেকেই ফুটবল খেলতে শুরু করেন এবং ১৯৯৫ সালে Newell’s Old Boys (রসারিওতে অবস্থিত একটি শীর্ষ বিভাগের ফুটবল ক্লাব) এর যুব দলে যোগ দেন। ১৩ বছর বয়সে মেসি এবং তার পরিবার বার্সেলোনা চলে আসেন এবং তিনি এফসি বার্সেলোনা এর অধীনের-১৪ দলে খেলা শুরু করেন। এখানে তিনি জুনিয়র দলে ১৪টি খেলায় ২১টি গোল করেন সেই সাথে তিনি দ্রুতগতিতে উচ্চ-স্তরের দলে সুযোগ করে নেন। এবং ১৬ বছর বয়সে এফসি বার্সেলোনা একটি ফ্রেন্ডলি ম্যাচে তাকে অফিসিয়ালভাবে ডেবিউ করায়।
ক্লাব জীবন: ২০০৪–০৫ সালে ১৭ বছর বয়সে মেসি স্প্যানিশ লা লিগায় (দেশের সর্বোচ্চ ফুটবল বিভাগ) The youngest official Player এবং সর্বোচ্চ গোলদাতা হন। মাত্র ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি (১.৭ মিটার) দৈর্ঘ্যে এবং ১৪৮ পাউন্ড (৬৭ কেজি) ওজনের মেসি ছিলেন শক্তিশালী, ভাল ভারসাম্যী এবং একজন দক্ষ খেলোয়াড়। স্বাভাবিকভাবে বাঁ পায়ে বল নিয়ন্ত্রণে দক্ষ মেসি খুব দ্রুত প্রতিপক্ষকে ধোকা দেওয়া এবং নিখুঁত পাসের ওস্তাদ ছিলেন। ২০০৫ সালে তাকে স্প্যানিশ নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়। এটি ছিল এফসি পার্সোনালের পক্ষ থেকে মেসির ওপর সম্মান প্রদর্শন। পরবর্তী বছরে মেসি বার্সেলোনার হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ (ইউরোপীয় ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপ) খেতাব জয় লাভ করে। দিনে দিনে মেসির খেলার দ্রুত উন্নত হতে থকে, এবং ২০০৮ সালে তিনি নিজেকে বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে প্রস্তুত করেন। ২০০৮ সালের ব্যালন ড'ওরের জন্য ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছিলেন। ২০০৮–০৯ মৌসুমে মেসি একটি চমৎকার বছর কাটান। এই বছর মেসি বার্সেলোনা ক্লাবকে ক্লাব টেবিলের প্রথম সারিতে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। এবং তিনটি প্রধান শিরোপা "লা লিগা চ্যাম্পিয়নশিপ, কোপা ডেল রে (স্পেনের প্রধান জাতীয় কাপ), এবং চ্যাম্পিয়ন্স লীগ" জয় করেছিল। সে বছরে তিনি ৫১ ম্যাচে ৩৮ গোল করেছিলেন, এবং বেলন ডি'ওর এবং ফিফা বিশ্বসেরা খেলোয়াড় অফ দ্যা ইয়ার হয়ে রোনালদোকে পেছনে ফেলতে সক্ষম হয়েছিলেন। ২০০৯–১০ মৌসুমে মেসি ডোমেস্টিক খেলায় ৩৪ গোল করেছিলেন এবং বার্সেলোনাকে লা লিগা পুনরায় চ্যাম্পিয়ন হতে মেসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি ইউরোপের সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে গোল্ডেন শু পুরষ্কার জিতেছিলেন। সেইসাথে এই বছর তিনি আর একটি বেলন ডি'ওর জেতেন।
লিওনেল মেসি |
মেসি বার্সেলোনা দলকে লা লিগা এবং চ্যাম্পিয়ন্স লীগ শিরোপা জয়য়ে প্রধান ভূমিকায় অংশ নেয়। ২০১২ সালের মার্চে, তিনি বার্সেলোনা জনপ্রিয় লা লিগা খেলায় ২৩৩ তম গোল করে, যার ফলে মাত্র ২৪ বছর বয়সেই তিনি ক্লাবের সবচেয়ে বেশি গোল স্কোরার হয়ে উঠেন। ২০১১–১২ মৌসুমে বার্সেলোনার হয়ে ৭৩ টি গোল করেন, যা ইউরোপীয় ফুটবল লীগে একক-সীজনে গার্ড মুলারের গড়া ৩৯ বছর পুরানো সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন রেকর্ড করেন। এই ঐতিহাসিক বছরের ফলে তাকে ২০১২ সালের চতুর্থবারের মতো মেসিকে বিশ্বসেরা খেলোয়াড় হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০১২–১৩ মৌসুমে তিনি ৪৬ টি লা লিগা লীগে গোল করে, এবং বার্সেলোনা ঐ সীজনেও জনপ্রিয় টপ-ডিভিশন চ্যাম্পিয়নশিপ জয় করে। ২০১৪ সালে তিনি টিমের সদস্য হিসেবে তার ৩৭০তম গোলকরে বার্সেলোনার গোল রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন রেকর্ড গড়েন। ২০১৪-১৫ মৌসুমে মেসি বার্সেলোনার হয়ে দলকে নেতৃত্ব দেন এবং ৪৩ টি গোল কোরে পঞ্চমবারের মত বিশ্বসেরা ফুটবলার হয়। ২০১৫-১৬ মৌসুমে বার্সেলোনা জয়ী হয় লা লিগা এবং কোপা ডেল রে, এবং এই সময়ে মেসি ৪১ গোল করে। ২০১৬-১৭ মৌসুমে বার্সেলোনার হয়ে মেসি ৫৩ গোল করে এবং বার্সেলোনা জয়ী হয় আরও একটি কোপা ডেল রে শিরোপা। ২০১৮-১৯ মৌসুমে মেসি ৫১ গোল করে এবং বার্সেলোনা আবারও লা লিগা চ্যাম্পিয়নশিপ জয় করে। ২০১৯ সালের শেষে তিনি তার ষট্টম ব্যালন ড'ওর জেতে এবং FIFA-র সেরা পুরুষ খেলোয়াড় হিসেবে নির্বচিত হন। ২০২০-২১ মৌসুমে বার্সেলোনার হয়ে মেসি সপ্তমবারের মতো কোপা ডেল রে জেতার খেতাব অর্জন করে। ২০২১ সালে লা লিগা রুলসের কিছু সীমাবদ্ধতা ও ক্লাবের আর্থিক অসুবিধার কারণে মেসি বার্সেলোনা ছাড়তে বাধ্য হন। অতঃপর তিনি ২০২১ সালের শেষে পি এস জি সঙ্গে সাইন করেন ও তার সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন সুপারস্টার কিলিয়ান ম্বাপে এবং নেইমার এবং ঐ বছরই তিনি আবারও একটি ব্যালন ড'ওর অর্জন করেছিলেন। তিনি পি এস জি সঙ্গে দুটি মৌসুম থাকেন এবং দলকে লিগ 1 টাইটেল জিততে সাহায্য করেছিলেন। ২০২৩ সালে মেসি ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেন।
লিওনেল মেসি, ফুটবল জগতের এক অদ্বিতীয় প্রতিভা, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেন। এই পদক্ষেপটি শুধু মেসির ক্যারিয়ারের জন্য একটি নতুন অধ্যায় নয়, বরং মার্কিন ফুটবলের জন্যও একটি যুগান্তকারী ঘটনা।
রোসারিও থেকে বার্সেলোনা
লিওনেল মেসির জন্ম ১৯৮৭ সালের ২৪ জুন, আর্জেন্টিনার রোসারিও শহরে। ছোটবেলা থেকেই তার ফুটবলের প্রতি আগ্রহ ছিল। মাত্র ১৩ বছর বয়সে, তিনি বার্সেলোনা ক্লাবের যুব দলে যোগ দেন। এখান থেকেই তার ফুটবল যাত্রা শুরু হয়। বার্সেলোনার সাথে তিনি একাধিক শিরোপা জিতেছেন এবং বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন।
বার্সেলোনার যুগ
২০০৪ সালে বার্সেলোনার প্রথম দলে অভিষেক করেন মেসি। এরপর থেকে, তিনি ক্লাবটির ইতিহাসের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তার পায়ে বলের অসাধারণ নিয়ন্ত্রণ, দ্রুতগতির dribbling এবং গোল করার অসাধারণ দক্ষতা বিশ্ব ফুটবলে তাকে একটি আইকন করে তোলে। বার্সেলোনার সাথে মেসির পদচারণা প্রায় দুই দশক স্থায়ী হয়, যেখানে তিনি ১০০০টিরও বেশি ম্যাচে অংশগ্রহণ করে ৬৫০টিরও বেশি গোল করেন।
জাতীয় দলে সাফল্য
মেসির জাতীয় দলের জন্যও অবদান অসামান্য। ২০২১ সালে কোপা আমেরিকা জয়ের মাধ্যমে তিনি আর্জেন্টিনার হয়ে প্রথম বড় আন্তর্জাতিক ট্রফি অর্জন করেন। এরপর, ২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে চ্যাম্পিয়ন করার মাধ্যমে মেসি তার ক্যারিয়ারে নতুন সাফল্য অর্জন করেন।
মার্কিন ফুটবলের উত্থান
মেসির আগমনের ফলে ইন্টার মায়ামি ক্লাবের জনপ্রিয়তা অনেক বেড়ে যায়। তার খেলা, প্রশিক্ষণ এবং ব্যক্তিত্বে ক্লাবটির সমর্থকদের মধ্যে নতুন প্রাণ সঞ্চার করে। মেসির উপস্থিতিতে, ফুটবল খেলার প্রতি দর্শকদের আগ্রহ অনেক গুণ বৃদ্ধি পায়।
সামাজিক প্রভাব
মেসির একক কৃতিত্বের বাইরে, তিনি সামাজিকভাবে একটি আইকনও। তিনি বিভিন্ন দাতব্য কার্যক্রমে অংশ নেন এবং তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন। তার জীবনযাপন এবং পারিবারিক মূল্যবোধ ফুটবল জগতে তাকে আরও অনেক বেশি জনপ্রিয় করে তোলে।
ভবিষ্যৎ
এখন মেসির সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ। ইন্টার মায়ামিতে তার ভূমিকা কেবল খেলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তিনি ক্লাবের উন্নতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। তিনি নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়দের কাছে একটি মডেল হিসেবে কাজ করছেন, তাদের স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করছেন।
লিওনেল মেসির এই নতুন অধ্যায়টি ফুটবল ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায় হতে চলেছে। তার ক্যারিয়ার এবং জীবনযাত্রার গল্প প্রতিটি ফুটবলপ্রেমীর হৃদয়ে চিরকাল অমলিন থাকবে।