স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস।
আজকের এ পর্বে আলোচনা করা হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস বিষয়ের প্রথম অধ্যায়ের ক, খ ও গ বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর। বিষয়: স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস। বিষয় কোড: ২১১৫০১।
খ' বিভাগ
প্রশ্নঃ ১। বাংলা নামের উৎপত্তি সম্পর্কে কি জান।
উত্তর: ভূমিকাঃ বাংলা নামের উৎপত্তি একটি গভীর ও ঐতিহাসিক প্রক্রিয়া। বাংলা নামের উৎপত্তি নিয়ে বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের মধ্যে মত পার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে। ১৫২৮ সালে প্রথম পাঠান সুলতানগন 'বাঙ্গালই' শব্দের ব্যবহার শুরু করেন যা সময়ে পরিক্রমায় বাংলা শব্দে পরিণত হয়।
বাংলা নামের উৎপত্তি: নিম্নে বাংলা নামের উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন তাত্ত্বিকদের মতামত তুলে ধরা হলো:-
১.আবুল ফজলের মতে: আবুল ফজল তার আইন-ই-আকবরী গ্রন্থে বাংলা নামের উৎপত্তি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি মনে করেন যে, 'বংগ' এর সাথে 'বাঁধ' অর্থ জ্ঞাপন আল যুক্ত হয়ে বাংলা নামের উৎপত্তি হয়েছে।
২.সুকুমার সেনের মতে: "বঙ্গ" নামের উৎপত্তি বিভিন্ন সূত্র থেকে এসেছে। তিনি বিশ্বাস করেন যে, এই নামের ভিত্তি সম্ভবত প্রাচীন "বঙ্গা" শব্দের মধ্যে নিহিত, যা ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে ব্যবহৃত হয়েছে।
৩.দ্বাদশ শতাব্দীর মত অনুযায়ী: দ্বাদশ শতাব্দীর মত অনুশাসনে বঙ্গাল বল (অর্থাৎ বাঙ্গাল রাজার সৈন্য) কতৃক নালন্দার একটি বিহার ধ্বংসের কথা উল্লেখ আছে। আর এ থেকে বঙ্গাল নামটি প্রসার লাভ করে। আবার কেউ কেউ মনে করেন বঙ্গ নামটি এসেছে চীন-তিব্বতীয় গোষ্ঠীর কোনো শব্দ থেকে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে প্রাচীন জনপদ বঙ্গ থেকে মধ্যযুগে বাঙ্গালাহ বা বাঙ্গালা এবং এখান থেকে বেঙ্গেলা বা বেঙ্গল আর বেঙ্গেলা বা বেঙ্গল থেকে বাংলা শব্দটি এসেছে।
প্রশ্নঃ ২। বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান বর্ণনা কর।
উত্তর: ভূমিকাঃ বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান দেশটির প্রাকৃতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দেশটি বঙ্গোপসাগরে নিকটে অবস্থিত হওয়া এর আবহাওয়া ও জলবায়ুতে বৈচিত্র্যময়তা লক্ষণীয়।
ভৌগোলিক অবস্থা: বাংলাদেশ এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণ অবস্থিত একটি দেশ। ২০° ৩৪` উত্তর অক্ষরেখা থেকে ২৬° ৪১` পূর্ব দ্রাঘিমা পর্যন্ত বাংলাদেশর বিস্তৃতি। বাংলাদেশের প্রায় মধ্য দিয়ে কর্কটক্রান্তি রেখা অতিক্রম করেছে। এদেশের মোট আয়তন ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গ কিলোমিটার। বাংলাদেশের পশ্চিম, উত্তর ও উত্তর-পূর্বে ভারত, দক্ষিণ-পূর্বে, মিয়ানমার এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। তাই বাংলাদেশ ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ।
বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম ব-দ্বীপ। এদেশের ভূখণ্ড উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ক্রমশ ঢালু। পূর্বে সামান্য উচ্চভুমি ছাড়া সমগ্র দেশ বিস্তীর্ণ সমভূমি। ভূমির বন্ধুরতার পার্থক্য ও গঠনের সময়ানুক্রমিক দিক থেকে বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতিককে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে বাংলাদেশ ভৌগোলিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। এর চতুর্দিকে ভারত মিয়ানমার ও বঙ্গোপসাগর দ্বারা বেষ্টিত। তাই এটি শুধু ভৌগলিক দিকদিয়ে নয় অর্থনৈতিক দিকদিয়েও দেশটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্নঃ ৩। বাঙালি সংকর জাতি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ভূমিকাঃ "সংকর" শব্দটির অর্থ হলো মিশ্রণ বা সংমিশ্রণ। অর্থাৎ, সংকর বলতে বোঝায় দুই বা ততোধিক উপাদান একত্রিত হয়ে নতুন কিছু তৈরি হওয়া। তেমনি, "সংকর জাতি" বলতে একাধিক জাতির সংমিশ্রণে আলাদা একটি জাতির উদ্ভবকে বোঝানো হয়।
বাঙালি সংকর জাতি: বাংলার ইতিহাস ও সমাজে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হলো বাঙালি সংকর জাতি। আর এ জাতিকে সংকর জাতি বলার পেছনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারণ বিদ্যামান রয়েছে। কারণ, এ জাতির উদ্ভব হয়েছে বিভিন্ন জাতির মিশ্রণের মাধ্যমে। এ জতি গঠনের পেছনে রয়েছে দ্রাবিড়, মুন্ডা, আর্য, মঙ্গোলীয় এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের প্রভাব। তবে বাঙালি জাতির প্রধান অংশ অস্ট্রালয়েড বা নিষাদ থেকে উদ্ভূত।
তাছাড়া, বিভিন্ন ধর্মের প্রভাবে সৃষ্টি হয়েছে বাংলা সাহিত্য, সঙ্গীত, নৃত্য ও শিল্পকলার বৈচিত্র, যা একটি আলাদা সংস্কৃতি তৈরিতে সহায়তা করেছে। এছাড়াও এ জাতি বিভিন্ন জাতির সংস্পর্শে এসে তাদের ভাষা সংস্কৃত ঐতিহ্য নিজেদের করে নিয়েছে এবং তৈরি করেছে নিজেদের একটি আলাদা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। মূলত, বাঙালি জাতি বলতে এককভাবে গঠিত কোনো একটি জাতিকে বোঝায় না; বরং এটি এমন একটি জাতি যা বিভিন্ন জাতির নৃতাত্ত্বিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংমিশ্রণে গঠিত হয়েছে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, বর্তমানে যে বাঙালি জাতির সৃষ্টি হয়েছে, তা একক কোনো জাতি থেকে উৎপন্ন হয়নি, বরং এটি বিভিন্ন জাতির সংমিশ্রণে গঠিত হয়েছে। তাই বাঙালি জাতিকে "সংকর জাতি" বলা হয়।