দেশ ও জনগোষ্ঠীর পরিচয়। অধ্যায়–২।

স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস। 

আজকের এ পর্বে আলোচনা করা হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস বিষয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ের ক, খ ও গ বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর। বিষয়: স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস। বিষয় কোড: ২১১৫০১।

দেশ ও জনগোষ্ঠীর পরিচয়। অধ্যায়–২।
ক' খ ও গ বিভাগ প্রশ্ন & উত্তর।

খ' বিভাগ

প্রশ্নঃ ১। সংস্কৃতির সমন্বয়বাদিতা বলতে কী বুঝ?

 উত্তর:  ভূমিকাঃ বাঙালি জাতি রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যেসকল আদর্শ কাজ করেছে সেগুলোর মধ্যে সংস্কৃতির সমন্বয়বাদিতা অন্যতম। সংস্কৃতির সমন্বয়বাদিতা বলতে এমন একটা প্রকৃয়াকে বুঝায় যেখানে সকল সংস্কৃতির মানুষ একত্রে বসবাস করে।  নিচে এ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল। 
সংস্কৃতির সমন্বয়বাদিতা: সাধারণ অর্থে সংস্কৃতির সমন্বয়বাদিতা বলতে বুঝায় বিভিন্ন সংস্কৃতির লোকদের মধ্যে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া। ধর্ম ও সংস্কৃতি যেহেতু অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িত, তাই ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে সংস্কৃতির সমন্বয়বাদিতা বলতে বি়ভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর সূত্র থেকে উৎসারিত সংস্কৃতির মিথস্ক্রিয়া এবং অন্তঃবর্ণ সমন্বধর্মী ঐতিহ্যকে বুঝায়। আবার সংস্কৃতি ও ধর্মীয় সহনশীলতা বিষয়টি অঙ্গাঅঙ্গী ভাবে জরিত তাই সংস্কৃতির সমন্বয়বাদিতার ক্ষেত্রে ধর্মীয় মিথস্ক্রিয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আর বাঙালির সংস্কৃতির সমন্বয়বাদিতা ধর্মের বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়ে থাকে।
বাঙালি জাতি যেহেতু সংকর জাতি তাই বাঙালি সমাজে বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষের দেখা যায়। আর এই সকল মানুষ ঐ সকল ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি নিজেদের কোরে নিয়েছে। যার মাধ্যমে এই সমাজে সংস্কৃতির সমন্বয়বাদিতার প্রকাশ ঘটেছে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় সংস্কৃতির সমন্বয়বাদিতা হল এমন একটি প্রকৃয়া যার মাধ্যমে সমাজের সকল মানুষের মধ্যে সংস্কৃতির মিথস্ক্রিয়া ঘটে থাকে। আর এই সংস্কৃতির সমন্বয়বাদিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে।


গ' বিভাগ

প্রশ্নঃ ১। বাঙালি জাতির নৃতাত্ত্বিক পরিচয় দাও।

 উত্তর:  ভূমিকাঃ পৃথিবীর যেকোনো সমাজ ব্যবস্থায় নৃতাত্ত্বিক ধারণাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোন দেশ বা এলাকার জনগোষ্ঠী কীভাবে গঠিত হয়েছে তা জানার জন্য এর অধীবাসীদের নৃতাত্ত্বিক গঠন বা নর গেষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য জানা অপরিহার্য। তেমনি বাঙালি এবং বাংলাদেশের ইতিহাস বুঝতে হলে এর অধীবাসীদের নৃতাত্ত্বিক গঠন বা বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে হবে। বিশ্বের সকল মানুষকে তাদের দেহের গঠন অনুসারে কতগুলো ভাগে ভাগ করা হয়। যা তাদের একটি জাতি থেকে দৈহিকভাবে আর একটি জাতির সাথে পার্থক্য করে থাকে। তেমনি বাঙালি তাদের দৈহিক গঠনগত কারনে অন্য জাতি থেকে আলাদা পরিলক্ষিত হয়। নিচে বাঙালি জাতির নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করা হল। 
নৃতাত্ত্বিক গঠন: “নৃগোষ্ঠী” বা “নরগোষ্ঠী”-এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হল "ethnicity" বা "race"। আর "race" হলো একই পূর্বপুরুষের বংশধরগন। অর্থাৎ মানুষ তার দৈহিক গঠন উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করে।
সমাজবিজ্ঞানী ই.বি. টেইলরের মতে, নরগোষ্ঠী হলো মানব জাতির একটি প্রধান বিভাগ যা বংশগতভাবে একটি নির্দিষ্ট দৈহিক বৈশিষ্ট্যাবফল লাভ করে।
আবার, এম শেফার্ড বলেন, নরগোষ্ঠী হলো জনগণের  একটি নির্দিষ্ট শ্রেণী যারা জৈবিকভাবে উত্তরাধিকার সূত্রে কতগুলো নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য লাভ করে।
সুতরাং, নরগোষ্ঠী বলতে এমন একটি দৈহিক বৈশিষ্ট্যকে বুঝায় যা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত। 
বাঙালি জাতির নৃতাত্ত্বিক পরিচয়: বাঙালি জাতি সম্পর্কে নৃতাত্ত্বিক ধারণাটি হল, বাঙালি জাতি সংকর জাতি। এই জাতির দৈহিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে বিভিন্ন জাতির দৈহিক বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। বর্তমান বাংলাদেশে এক সময় বিভিন্ন জাতির বসবাস ছিল যার ফলে এই নৃতাত্ত্বিক সংমিশ্রণ ঘটে। নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল। 
১.আদি অস্ট্রালয়েড: বাংলাদেশের কতিপয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে আদি অস্ট্রালয়েড নৃ-গোষ্ঠীর দৈহিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। ধারণা করা হয় আদি অস্ট্রালয়েড থেকে এই নৃ-গোষ্ঠীর সৃষ্টি হয়েছে।  আদি অস্ট্রালয়েড এর নিকটতম প্রতিনিধি হিসেবে মুন্ডা, মালে, খারিনা, ওরাও, সাঁওতাল ও মাল পাহাড়িদের চিন্তিত করা যেতে পারে। 
২.দ্রাবিড়: বাঙালি জাতির মধ্যে প্রতিনিধিত্বমূলক দ্রাবিড় জাতির বিশুদ্ধ কোনো জনগোষ্ঠী পাওয়া না গেলেও মধ্যম নাসাকৃতি, দীর্ঘ শিরস্কতা ও মোটামুটি সুন্দর অবয়বের বৈশিষ্ট্য দ্রাবিড় হিসেবে গণ্য করা হয়। 
৩.আর্য: ইন্দ্রো ভূমধ্য দীর্ঘ শিরস্ক দৈহিক বৈশিষ্ট্য আমাদের মধ্যে কিছুটা দেখা যায়, যা আর্যদের দৈহিক বৈশিষ্ট্যের সাথে মেলে। এই দৈহিক বৈশিষ্ট্য বেশিরভাগ বাঙালি হিন্দুদের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়।
৪.আলপীয়: চওড়া-গোল মাথা, সরু নাক, গোঁফ-দাড়ির প্রাচুর্য, শক্তসমর্থ চেহারা বিশিষ্ট একজাতীয় উচ্চকোটি বা উচ্চবর্ণের লোক পামির অঞ্চল থেকে বাংলাদেশ আগমন করে। এই বহিরাগত গোষ্ঠীর লোকজনদের নৃ-তত্ত্ববিদরা আলপীয় নামে অভিহিত করেছেন। এদের থেকে বাংলাদেশর ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, ও অন্যান্য হিন্দুদের উদ্ভব হয়েছে।
৫.মঙ্গলীয়: বাংলাদেশের জনগনের মধ্যে চেপ্টা নাক, গালের উঁচু হাড়, গোঁফ-দাড়ি অপেক্ষাকৃত কম, গোল বা মাঝারি মাথা, এবং চোখের কোনে ভাঁজ। ইত্যাদি দৈহিক বৈশিষ্ট্যের লোক দেখা যায় যা মঙ্গলীয়দের দৈহিক বৈশিষ্ট্যর সাথে মেলে। গারো, কোচ, ত্রিপুরা, চাকমা, মগ, রাজবংশী ইত্যাদি উপজাতি এই গোষ্ঠীভূক্ত।
সুতরাং, বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর সাথে মিশে বাঙালি একটি সংকর জাতিতে পরিণত হয়েছে। আর্যদের সাথে সাঁওতাল, গারো, মুন্ডা ইত্যাদির সংমিশ্রণ ঘটেছে। তাছাড়া তুর্কি, পাঠান, ইরানি, আরব সহ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর প্রভাব বাঙালিদের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়। 
বাঙালি জাতির নৃগোষ্ঠীগত পরিচয় সম্পর্কে মনীষীদের উক্তি: বাঙালি নৃগোষ্ঠীগত পরিচয় প্রদানে বিভিন্ন মনীষী বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদার করেছেন। তাদের এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা করা হল। 
১.বিরাজ শঙ্কর: বিরাজ শঙ্কর তার "বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি" গ্রন্থে বলেন “বাঙালি সংস্কৃতির মূলে রয়েছে একাধিক নৃগোষ্ঠীর সমাহার, যা আমাদের বৈচিত্র্যময় করে।” তিনি মনে করেন বাঙালির নৃতাত্ত্বিক গঠন দ্রাবিড়ীয়, আদি অস্ট্রালয়েড, মঙ্গোলীয়, ককেশীয়দের দৈহিক বৈশিষ্ট্যের সাথে মিল পাওয়া যায়।
২.হটন-গুহের অভিমত: জে. এইচ. হটন ও বি. এস গুহ- এর মতে, ক্ষুদ্র ও প্রশস্ত মুখমণ্ডল, দীর্ঘ সুন্দরতর, বঙ্কিম বা কুঞ্জ নাক, বিবর্ণ শ্বেত থেকে তামাটে বাদামি গায়ের রং, চোখ হালকা বাদামি থেকে কাল, চুল সোজা ও তরঙ্গায়িত দৈহিক বৈশিষ্ট্যের জনগোষ্ঠী হচ্ছে বাঙালি, অসমীয়া, উড়িয়া, মহারাষ্ট্র ও গুজরাটীরা আর্মেনীয় আলপাইন জনগোষ্ঠী দৈহিক বৈশিষ্ট্যে অন্তর্ভুক্ত আর চাকমারা মঙ্গোলীয়া। তবে অনেকেই হটন- গুহের এ মতের সাথে একমত পোষণ করেননি ।
৩.নীহার রঞ্জন রায়: নীহার রঞ্জন রায় বাঙালির নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর পরিচয় দিতে গিয়ে তার 'বাঙালির ইতিহাস' গ্রন্থে বলেন অনেক রূপান্তর ও পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অস্ট্রেলীয় ও দ্রাবিড় নৃগোষ্ঠীর ধর্মীয় আচার বিশ্বাস হিন্দু সমাজে অনুপ্রবেশ করে। এতে বাঙালি হিন্দুদের নৃগোষ্ঠীগত পরিচয় ফুটে উঠে। এদেশে নৃ-গোষ্ঠী গঠনে ঐসব আদি অস্ট্রেলীয় ও দ্রাবিড় প্রভাব বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ তবে আর্যদের প্রভাবও একেবারে অস্বীকার করা যায় না। তিনি বলেন, “বাঙালি জাতির গঠনে অস্ট্রেলীয় ও দ্রাবিড় জাতির সংমিশ্রণ ছিল।”
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে অস্ট্রিক, দ্রাবিড়, আলপীয়, জনগোষ্ঠীর সাথে আর্য, মঙ্গলীয়, আরবীয়, তুর্কি প্রভৃতি জাতির সংমিশ্রণে এবং দীর্ঘ দিনের অনুশীলন, গ্রহণ, বর্জন ও রুপান্তরকরণের মাধ্যমে বর্তমান বাঙালি জাতির জীবন গড়ে উঠেছে। বর্তমান বাঙালি জাতি বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর রক্তধারার সংমিশ্রণে এক বিচিত্র সংকর জাতি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।

প্রশ্নঃ ২। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভূ-প্রকৃতির প্রভাব আলোচনা কর।

 উত্তর:  ভূমিকা: বাংলাদেশ একটি ভূ-প্রকৃতিগতভাবে বৈচিত্র্যময় দেশ, যেখানে নদী, জলাভূমি, পর্বত ও সমুদ্রের মেলবন্ধন ঘটেছে। এর ভূ-প্রকৃতি শুধুমাত্র দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেনা, বরং অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে গভীর প্রভাব ফেলে। দেশটির ৭০% জনসংখ্যা কৃষির উপর নির্ভরশীল, এবং ভূ-প্রকৃতির বৈচিত্র্য কৃষির উৎপাদন, জলসম্পদ ব্যবস্থাপনা, এবং মৎস্যচাষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হচ্ছে, যা অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নকে চ্যালেঞ্জ করে। এই প্রেক্ষাপটে, ভূ-প্রকৃতির প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্লেষণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি কেবল প্রকৃতি ও মানব সমাজের সম্পর্কই নয়, বরং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কার্যকারিতা ও দিকনির্দেশনাকেও নির্ধারণ করে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভূ-প্রকৃতির প্রভাব: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে, ভূ-প্রকৃতি যেসকল প্রভাব বিস্তার করে নিম্নে তা আলোচনা কর হল।
১.জলবায়ু ও বৃষ্টিপাত: বাংলাদেশের জলবায়ু মিশ্রিত জলবায়ু। এখানে শীত, বর্ষা, গ্রীষ্ম পরিলক্ষিত হয় । বর্ষাকালে এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়, যা কৃষির জন্য উপকারী। তবে, অতিরিক্ত বৃষ্টি বন্যার ঝুঁকি বাড়ায় যা এখানকার অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলে।
২.নদী ও জল সম্পদ: বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। এদেশে জালের মত ছড়িয়ে ছিটিয়ে অনেক নদী রয়েছে, যা কৃষি ও মৎস্যজীবিতে সহায়তা করে। নদীর পানির প্রাপ্যতা কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি করে। আবার নদীর মাছ এদেশের মানুষের জীবিকার উৎস হিসেবে কাজ করে।
৩.মাটি ও কৃষি: বাংলাদেশ পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ হওয়ায় এখানকার মাটি উর্বর প্রকৃতির। এই উর্বর মাটি বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদনের প্রধান উৎস হিসাবে কাজ কর । আর কৃষি উৎপাদিত পণ্য বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান উৎস।
৪.প্রাকৃতিক দুর্যোগ: বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে এখানে প্রচুর পরিমাণে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও নদী ভাঙন দেখা দেয়। যার কারণে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এই দুর্যোগগুলো কৃষি ও অবকাঠামোর ক্ষতি সাধন করে।
৫.অবকাঠামো ও যোগাযোগ: ভূ-প্রকৃতি অবকাঠামোর উন্নয়নকে প্রভাবিত করে। নদী ও পাহাড়ি অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ায়, এখানকার অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ে।
৬.পর্যটন সম্ভাবনা: বাংলাদেশ সৌন্দর্যের লীলাভূমির একটি দেশ। সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য ও ঐতিহাসিক স্থানসমূহ বাংলাদেশের পর্যটন খাতে অবদান রাখে, যা অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে।
৭.নিবন্ধিত শিল্প ও কৃষির আধুনিকায়ন: এখানকার উৎপাদিত কৃষি পণ্য শিল্পের কাচামাল হিসাবে ব্যবহারিত হয়। তাছাড়া এখানকার ভূ-প্রকৃতির বৈচিত্র্যের কারণে বিভিন্ন শিল্পের বিকাশ ঘটছে, যা অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাহায্য করেছে।
৮.নদী-মহাসাগরের ভূমিকা: গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদী এবং বঙ্গোপসাগরের নিকটতা মৎস্য ও জলজ সম্পদের প্রাপ্যতা বৃদ্ধি করে, যা স্থানীয় অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
৯.বন্যা এবং নদী ভাঙন: বন্যা ও নদীভাঙন বাংলাদেশের একটি জাতীয় সমস্যা। বন্যা ও নদীভাঙনের ফলে কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি হয় এবং অনেকে ঘরবাড়ি হারায়, ফলে শ্রমশক্তির অভাব সৃষ্টি হয় এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়।
১০.জীববৈচিত্র্য: দেশের ভূ-প্রকৃতি বিভিন্ন ধরনের গাছপালা এবং প্রাণীর আবাসস্থল তৈরি করে, যা পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে এবং পর্যটন শিল্পেরও একটি উৎস হিসেবে কাজ কর।
১১.জলবায়ু পরিবর্তন: সমুদ্রপৃষ্ঠের উত্থান ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অর্থনীতিতে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে, বিশেষ করে কৃষি এবং উপকূলীয় অঞ্চলগুলিতে এর ভয়াবহতা অনেক বেশি পরিলক্ষিত হয়।
১২.শিল্পায়ন ও নগরায়ণ: ভূ-প্রকৃতি কিছু অঞ্চলে শিল্পায়নের সুযোগ সৃষ্টি করে। নদী তীরবর্তী এলাকায় শিল্পায়ন ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমের উন্নতি হচ্ছে, যা অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে।
১৩.জলবিদ্যুৎ উৎপাদন: দেশের বিভিন্ন নদী ও জলাশয় জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, যা শক্তি সরবরাহে সহায়তা করে। আর এই জলবিদ্যুৎ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
১৪.ফসলের বৈচিত্র্য: এদেশের ভূ-প্রকৃতির বৈশিষ্ট্যের কারণে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করা সম্ভব হয়, যা খাদ্য নিরাপত্তা এবং কৃষকদে জন্য আয়ের উৎস হিসাবে কাজ করে।
উপসংহার: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভূ-প্রকৃতির প্রভাব গভীর এবং বহুমাত্রিক। দেশের উর্বর মাটি, নদী-জলাশয় ও জলবায়ু কৃষি, মৎস্যচাষ এবং অন্যান্য শিল্পে অবদান রাখছে। যদিও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এই অর্থনীতির স্থিতিশীলতা হুমকির সম্মুখীন হয়, তবুও সঠিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা গ্রহণের মাধ্যমে এর সুযোগকে কাজে লাগানো সম্ভব। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে উন্নত প্রযুক্তি এবং গবেষণার মাধ্যমে এই ভূ-প্রকৃতির সুবিধাগুলি সর্বাধিক করা গেলে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। সুতরাং, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং স্থায়িত্বের জন্য ভূ-প্রকৃতির গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না।

1 মন্তব্যসমূহ

নবীনতর পূর্বতন