খ' বিভাগ
বংলার ইতিহাস। অনার্স তৃতীয় বর্ষ।
অজকের আলোচনা, দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা বলতে কি বুঝ? অথবা, দ্বৈত শাসন ব্যাখ্যা কর?
দ্বৈতশাসন ব্যবস্থা |
প্রশ্নঃ দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা বলতে কি বুঝ?
অথবা, দ্বৈত শাসন ব্যাখ্যা কর?
উত্তর: ভূমিকা: রবার্ট ক্লাইভ দ্বিতীয়বার গভর্নর হিসেবে বাংলায় এসে যে শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেন তা দ্বৈতশাসন নামে পরিচিত। বাংলা তথা ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে দেওয়ানি লাভ একটি অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ ঘটনা। ১৭৬৫ সালে দেওয়ানি লাভ মূলত দ্বৈতশাসনের সূচনা করে। এই শাসন ব্যবস্থা ১৭৬৫ থেকে ১৭৭২ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
দ্বৈতশাসন: দিল্লির সম্রাট শাহ আলমের নিকট থেকে দেওয়ানি লাভ করে এবং বাংলার নবাবকে বৃত্তিভোগীতে পরিণত করে ক্লাইভ বাংলাদেশে দ্বৈতশাসন প্রবর্তন করেন। এই শাসন ব্যবস্থা অনুযায়ী ক্লাইভ বাংলার নবাব এর উপর বিচার ও শাসন বিভাগের দায়িত্ব অর্পণ করেন এবং রাজস্ব আদায় এবং প্রতিরক্ষার দায়িত্ব ন্যস্ত করেন কোম্পানির উপর। এর ফলে নবাব পেলেন দায়িত্বহীন দায়িত্ব আর কোম্পানি লাভ করলেন দায়িত্বশীল ক্ষমতা। এই অদ্ভুত ব্যবস্থা ইতিহাসে দ্বৈতশাসন' নামে পরিচিত। এই শাসন ব্যবস্থায় ক্লাইভ রেজা খান এবং সেতার রায়কে নায়েব নাজিম নিযুক্ত করে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার রাজস্ব আদায়ের ভার তাদের উপর ন্যস্ত করেন। দেওয়ানি শাসন এবং নিজামত শাসন উভয়ই রেজা খানের উপর ন্যস্ত করেন। পার্মিভ্যাল স্পিয়ার দ্বৈত শাসন ব্যবস্থাকে 'পরোক্ষ শাসন' বলে অভিহিত করেন।
অবশ্য গভীরভাবে বিচার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, দ্বৈতশাসন ব্যবস্থা ছিল আসলে একটি সংবিধানিক মুখোশ। ক্লাইভ ইচ্ছা করলে নবাবকে অপসারণ করে সরাসরি ব্রিটিশ রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারতেন।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, লর্ড ক্লাইভ কর্তৃক প্রবর্তিত দ্বৈতশাসন ছিল এদেশবাসীর জন্য এক চরম অভিশাপ। এ ব্যবস্থায় নবাব ও কোম্পানির উপর স্ব স্ব দায়িত্ব অর্পিত হলেও প্রকৃতপক্ষে নবাবের কোন ক্ষমতা ছিল না। ফলে বাংলার শাসন ব্যবস্থার এক চরম অরাজকতার সৃষ্টি হয়।